Saturday 25 January 2014

ক্রিকেটের অস্তিত্ব বিলীন করে প্রতিদান নয়

তিন দেশের কর্তৃত্ব আর মুনাফা লাভের চালে বিশ্ব ক্রিকেটের যে বারোটা বাজতে যাচ্ছে, সেটা আর এখন বলার অপেক্ষা রাখে না। এত দিনে সবাই জেনে গেছেন ক্রিকেটকে নিয়ে কী চালটা চালতে যাচ্ছে ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ড। তাদের মুনাফার জন্য সমস্ত ক্রিকেটকে তারা ডুবিয়ে দিচ্ছে দুনিয়ার সামনে। এ ষড়যন্ত্রের যতটুকু জেনেছি তাতেই লজ্জায় মাথা নত হয়ে গেছে। এ নাকি সভ্যতম খেলার ধারক-বাহকদের পরিকল্পনা।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) এ সংস্কার পরিকল্পনা পাস হলে ভারত-অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের ক্রিকেটক্ষমতা আর মুনাফা অর্জনের বাইরে আমাদের যে কঠিনতম ক্ষতিটা হবে, সেটা হলো ক্রিকেটে বাংলাদেশের টেস্ট খেলার সুযোগ নেমে যাবে প্রায় শূন্যের কোঠায়। আর এ রকম একটা প্রস্তাব ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থান জোরালোভাবে এর বিপক্ষে থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক। যেখানে জাতীয় ক্রিকেট বিলীন হয়ে যাচ্ছে, সেখানে বিপক্ষ অবস্থান নিতে কোনো ভয়, শঙ্কা থাকার কথায় নয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। কিন্তু তার পরও ভয় হচ্ছে, কারণ দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় যখন কিছু দেশ নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশে অনুষ্ঠেয় এশিয়া কাপ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে পারবে কি না, সন্দেহ পোষণ করছিল, তখন প্রতিবেশী ভারত বাংলাদেশের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছিল। কিন্তু এখন দেশের স্বার্থ বাদ দিয়ে কোনো কারণে ভারতের ওই দৃঢ় অবস্থানের ঋণ যদি শোধ করতে চায় বিসিবি, তাহলেই বাংলাদেশের টেস্ট ক্রিকেটের কফিনে শেষ পেরেকটি মারা হয়ে যাবে।
আর কেন জানি মনে হচ্ছে, এটাই করতে যাচ্ছে বিসিবি। কারণ, আইসিসির সংস্কার প্রস্তাবের ব্যাপারে কৌশলী অবস্থান নিয়েছে বিসিবি। ভাবখানা এমন যে, ‘ঝোপ বুঝে কোপ মারা’। কিন্তু বিসিবির এই ‘ঝোপ বুঝে কোপ মারা’র নীতির কোনো সুযোগ নেই এখন। এখানে ক্রিকেট অস্তিত্বের সঙ্গে দেশের অস্তিত্বও সম্পৃক্ত হয়ে গেছে। বিশ্ব জেনে গেছে, সংস্কার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশ ক্রিকেটই সবচে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তার পরও যদি এর বিপক্ষে বাংলাদেশ না দাঁড়ায়, তাহলে দিনে দিনে গড়া আমাদের এই গর্বের ক্রিকেট যেমন শেষ হয়ে যাবে, সঙ্গে সঙ্গে দেশের মানমর্যাদাও ধুলোয় লুটাবে পৃথিবীর কাছে। তারা দেখবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিসিআই) খুশি করতে গিয়ে আমরা কীভাবে নতজানু হয়ে পড়ি।
এটা তো সত্য, প্রথমে আমাদের বাঁচতে হবে, তারপর কার সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে না ঘটবে, সেগুলোর কথা আসে। যে পরিকল্পনায় আমাদের ক্রিকেটের অস্তিত্বই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, সেখানে এ মিথ্যে জুজুর ভয় পেয়ে কী লাভ। সাময়িক লাভের আকার-ইঙ্গিত হয়তো দেখিয়েছেন ষড়যন্ত্র মহারাজ তিন দেশের কর্তাব্যক্তিরা। কিন্তু এটা তো মূর্খও বুঝে, যদি নিজের ক্রিকেটই না থাকে, তাহলে ক্রিকেট মুনাফা থাকবে কোত্থেকে। সারা পৃথিবীর ক্রিকেটমহলে এ দুরভিসন্ধি পরিকল্পনা নিয়ে তীব্র চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। শুধু আমাদের কর্তাব্যক্তিরা পরিষ্কার করে কিছু বলছেন না। শুধু দেখছি-ভাবছি করছেন, আর ভেতরে ভেতরে নাকি এ ‘কালো সংস্কার প্রস্তাবে’র পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। আর যা-ই করেন, জাতীয় এ ইস্যুতে দেশের স্বার্থ বাদ দিয়ে কোনো পক্ষ সমর্থন করা কেউ মানবে না কিন্তু। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টাও বিপজ্জনক হবে।
ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে নানা সংগঠনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, শুরু হয়ে গেছে প্রতিবাদ। আমি অস্ট্রেলিয়ায় থাকি। এখানেও প্রতিবাদের প্রস্তুতি চলছে।
শেষে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের প্রতি একটা অনুরোধ করি, আমার বাড়ি কুলিয়ারচরে। আপনি আমাদের সাংসদ। জাতীয় স্বার্থ বাদ দিয়ে অন্য দেশকে খুশি করতে গিয়ে যেন আবার জাতীয় ‘ভিলেনে’ পরিণত না হন এটা খেয়াল রাখবেন।
কাউসার খান, সিডনি থেকে
kawsark@gmail.com

0 comments:

Post a Comment